সোমবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ - ০০:৪৭
হাদীসের আলোকে রজব মাস ও আমাদের দায়িত্ব

রজব মাস ইসলামি বর্ষপঞ্জির একটি মর্যাদাপূর্ণ মাস। এটি আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের এক বিশেষ সুযোগ।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আহলুল বাইত (আ.) থেকে বর্ণিত বহু হাদীসে এই মাসের ফজিলত ও আমলের গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে।

হাদীসের আলোকে রজব মাসের ফজিলত
১. রজব আল্লাহর মাস
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত:

 كَانَ رَسُولُ اللَّهِ (ص) إِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَجَبٍ يَقُولُ: هَذَا شَهْرُ اللَّهِ، وَهَذَا شَهْرٌ تُصَبُّ فِيهِ الرَّحْمَةُ، فَأَكْثِرُوا فِيهِ الِاسْتِغْفَارَ وَقُولُوا: رَبِّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي.

“যখন রজব মাস আসত, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলতেন— এটি আল্লাহর মাস। এই মাসে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। অতএব, তোমরা এই মাসে বেশি বেশি ইস্তিগফার করো এবং বলো: ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন ও দয়া করুন।’”

[আল-কাফি, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬৬]

২. রজব মাসে রোজার ফজিলত
ইমাম আলী (আ.) বলেন,

 صَوْمُ يَوْمٍ مِنْ شَهْرِ رَجَبٍ يُوجِبُ رِضْوَانَ اللَّهِ الْأَكْبَرَ،وَ يُطْفِئُ غَضَبَ اللَّهِ، وَيُغْلِقُ بَابًا مِنْ أَبْوَابِ النَّارِ.

“রজব মাসে একদিন রোজা রাখা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কারণ, তাঁর ক্রোধ নিভিয়ে দেয় এবং জাহান্নামের একটি দরজা বন্ধ করে দেয়।”
[মুস্তাদরাক আল-ওয়াসায়েল, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৫২৬; বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৯৪]

৩. রজব মাসে ইবাদতের প্রতিদান
ইমাম মুহাম্মাদ বাকির (আ.) বলেন,

> مَنْ عَبَدَ اللَّهَ فِي شَهْرِ رَجَبٍ وَاسْتَغْفَرَهُ أَعْطَاهُ اللَّهُ أَضْعَافَ مَا أَعْطَى فِي غَيْرِهِ مِنَ الشُّهُورِ.

“যে ব্যক্তি রজব মাসে আল্লাহর ইবাদত করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে অন্যান্য মাসের তুলনায় বহুগুণ বেশি প্রতিদান দান করেন।”

[ওয়াসায়েলুশ শিয়া, খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ৩২১]

রজব মাসে আমাদের দায়িত্ব
১. বেশি বেশি ইস্তিগফার
ইমাম সাদিক (আ.) বলেন,

 مَنْ قَالَ فِي رَجَبٍ أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ كَتَبَ اللَّهُ لَهُ الْجَنَّةَ.

“যে ব্যক্তি রজব মাসে একশতবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতুবু ইলাইহি’ পাঠ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবধারিত করে দেন।”
[বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৯৪]

২. সদকা ও দান
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন,

الصَّدَقَةُ فِي شَهْرِ رَجَبٍ تُطْفِئُ الْخَطَايَا كَمَا يُطْفِئُ الْمَاءُ النَّارَ.

“রজব মাসে সদকা করা গুনাহসমূহকে এমনভাবে নিভিয়ে দেয়, যেমন পানি আগুন নিভিয়ে দেয়।”

[বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৯৪, পৃষ্ঠা ৩৪৫]

৩. যিয়ারত ও দোয়া
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর যিয়ারত সম্পর্কে:
আরবী:

 مَنْ زَارَ الْحُسَيْنَ (ع) فِي رَجَبٍ كَانَ كَمَنْ زَارَ اللَّهَ فِي عَرْشِهِ.

“যে ব্যক্তি রজব মাসে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর যিয়ারত করে, সে যেন আল্লাহকে তাঁর আরশে যিয়ারত করল।”

[কামিলুয যিয়ারাত, পৃষ্ঠা ১৭২]

৪. ইমাম মাহদী (আ.)-এর জন্য দোয়া
আহলুল বাইত (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে—

 أَكْثِرُوا الدُّعَاءَ بِتَعْجِيلِ الْفَرَجِ،. فَإِنَّ ذَلِكَ فَرَجُكُمْ.

“তোমরা ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর জুহুরের জন্য বেশি বেশি দোয়া করো; কারণ তাঁর জুহুরেই তোমাদের মুক্তি নিহিত।”
[কামালুদ্দীন, শাইখ সাদূক]

রজব মাস রহমত, মাগফিরাত ও আত্মশুদ্ধির এক অনন্য সুযোগ। আহলুল বাইত (আ.)-এর হাদীসসমূহে এই মাসকে ইবাদত, ইস্তিগফার, রোজা ও দানের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের উচিত এই মাসকে গাফলতিতে নষ্ট না করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha